বীমা বা ইনস্যুরেন্স!বীমার অর্থ এই যে, ভবিষ্যতের যে সকল সম্ভাব্য বিপদ আপদ ও দুর্ঘটনার মানুষ সম্মুখীন হয় তার মধ্যে কোন নির্দিষ্ট ধরনের দুর্ঘটনার আর্থিক ক্ষতি পূরণ দেবে বলে কোন ব্যক্তি অথবা কোম্পানী যামানত নেয়।চতুর্দশ খ্রীষ্টীয় শতাব্দীতে এর সূত্রপাত ঘটে।যেসকল দুর্ঘটনার উপর বীমা করা হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে বীমার তিনটি বড় বড় প্রকার রয়েছে:
মাল বীমা (GOODS INSURANCE):এর নিয়ম হল এই যে, যে ব্যক্তি কোন মালের উপর বীমা করতে চায় সে নির্দিষ্টহারে বীমা কোম্পানীকে কিস্তী (চাঁদা) আদায় করে যায়; যাকে প্রিমিয়াম (PREMIUM) বলা হয়। অতঃপর সেই মাল দুর্ঘটনাগ্রস্ত হলে কোম্পানী তার আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করে থাকে। যদি মাল কোন প্রকারের দুর্ঘটনাগ্রস্ত না হয়, তাহলে বীমাকারী যে প্রিমিয়াম (কিস্তী) আদায় করেছে তা ফেরত দেওয়া হয় না। অবশ্য দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে বীমার টাকা বীমাকারী লাভ করে থাকে এবং তদ্দবারা সে নিজের ক্ষতিপূরণ করে থাকে। জাহাজ, গাড়ি, বাড়ি প্রভৃতির বীমা এরই পর্যায়ভুক্ত। ঝুঁকির বীমা:এর অর্থ হল এই যে, ভবিষ্যতে কারো উপর কোন ঝুঁকি এলে সে ঝঞ্ঝাট থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য বীমা করা। যেমন, মোটর গাড়ি চালাবার সময় কোন দুর্ঘটনার ফলে কোন অপর ব্যক্তির ক্ষতি হলে গাড়িচালকই সে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ঐ বীমা করা থাকলে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত তৃতীয় পক্ষকে ক্ষতিপূরণ আদায় করে বীমাপ্রতিষ্ঠান।যাকে সাধারণত- (THIRD PARTY INSURANCE) বলা হয়।
জীবন-বীমা (LIFE INSURANCE):এর অর্থ হল এই যে, কোম্পানী বীমাকারীর সহিত এই চুক্তি করে যে, একটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তার (বীমাকারীর) অপমৃত্যু হলে বীমা-প্রতিষ্ঠান চুক্তিকৃত প্রতিশ্রুত টাকা তার ওয়ারেসীন (উত্তরাধিকারী)দেরকে আদায় করে দেবে।এর আবার কতকগুলো ধরন আছে। কোন কোন ক্ষেত্রে মেয়াদ নির্দিষ্ট করা থাকে। সেই মেয়াদের ভিতরে মারা গেলে চুক্তির টাকা মৃত বীমাকারীর ওয়ারেসীনরা পেয়ে যায়। যদি সে মেয়াদে তার মৃত্যু না হয়, তাহলে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর বীমাও শেষ হয়ে যায় এবং জমাকৃত টাকা সূদে-আসলে ফেরত পেয়ে যায়। পক্ষান্তরে কোন কোন ক্ষেত্রে মেয়াদ নির্দিষ্ট থাকে না।এরূপ হলে যখনই বীমাকারীর মৃত্যু হয়, তখনই তার টাকা তার ওয়ারেসীনরা পেয়ে যায়।
কর্মপদ্ধতি এবং কাঠামোগত ও গঠনপ্রকৃতির দিক থেকে বীমা তিন প্রকারের:
গ্রুপ ইনস্যুরেন্স: সরকার এমন এক পথ ও পদ্ধতি অবলম্বন করে যাতে জনসাধারণের কোন একটি দল নিজেদের কোন ক্ষতিপূরণ অথবা কোন মুনাফালাভের ক্ষেত্রে সুবিধাভোগ করতে পারে।যেমন, সরকারী চাকরিজীবিদের বেতনের সামান্য একটা অংশ প্রত্যেক মাসে কেটে রেখে কোন বিশেষ এক ফান্ডে জমা করা হয়। অতঃপর কোন চাকরিজীবীর মুত্যু হলে অথবা সে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হলে মোটা টাকা আকারে সাহায্য তার ওয়ারেসীনকে অথবা খোদ তাকে সমর্পণ করা হয়। এটি একটি সামাজিক (সমাজকল্যাণমূলক) কর্ম। যা সরকার তার দেশবাসীর সম্ভাব্য দুর্ঘটনার সময় অনুদান স্বরূপ দুর্গতদেরকে সাহায্য করে থাকে। সুতরাং এটি সরকারের তরফ থেকে একপ্রকার অনুদান। কোন বিনিময়চুক্তির ফলে বিনিমেয় অর্থ নয়। এ কারণে এই প্রকার অনুদান গ্রহণে কোন প্রকার দ্বিমত নেই।[1]
সমবায় বীমা:এর নিয়ম এই যে, যাদের সম্ভাব্য দুর্ঘটনা একই ধরনের হয়ে থাকে এমন কতকগুলি লোক আপোসে মিলে-মিশে একটি ফান্ড তৈরী করে নেয়। অতঃপর তারা এই চুক্তিবদ্ধ হয় যে, আমাদের মধ্যে কেউ দুর্ঘটনাগ্রস্ত হলে এ ফান্ড থেকে তার ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।এ ফান্ডে কেবল তার সদস্যদের টাকা জমা থাকে এবং ক্ষতিপূরণ কেবল এ সকল সদস্যদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। বৎসরান্তে হিসাব নেওয়া হয়।ক্ষতিপূরণ প্রদত্ত টাকার অংক যদি ফান্ডের টাকার চাইতে বেশী হয়ে যায়, তাহলে সে হিসাবে সদস্যদের নিকট থেকে আরো বেশী টাকা আদায় করা হয়। আর ফান্ডের টাকা উদ্বৃত্ত হলে সদস্যদেরকে ফেরত দেওয়া হয় অথবা তাদের তরফ থেকে আগামী বছরের জন্য ফান্ডের দেয় অংশ স্বরূপ রেখে নেওয়া হয়।প্রারম্ভিকভাবে বীমার এই ধরনই প্রচলিত ছিল। যার বৈধ-অবৈধতার ব্যাপারে কোন দ্বৈধ নেই। যে সমস্ত উলামাগণ বীমা নিয়ে আলোচনা করেছেন তাঁরা সকলেই এর বৈধতার ব্যাপারে একমত।
বাণিজ্যিক বীমা:এই বীমার নিয়ম-পদ্ধতি এই যে, বীমা কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করা হয়। কোম্পানীর উদ্দেশ্য থাকে, বীমাকে বাণিজ্যরূপে পরিচালিত করা; যার মূল উদ্দেশ্য থাকে বীমার অসীলায় মুনাফা উপার্জন। এই কোম্পানী বিভিন্ন ধরনের বীমার স্কীম জারী করে। যে ব্যক্তি বীমা করতে চায় তার সহিত বীমা কোম্পানীর এই চুক্তি থাকে যে, এত টাকা এত কিস্তিতে আপনি আদায় করবেন। নোকসানের ক্ষেত্রে কোম্পানী আপনার ক্ষতিপূরণ দেবে। কোম্পানী কিস্তির পরিমাণ নির্ধারণ করার জন্য হিসাব করে নেয় যে, যে সম্ভাব্য দুর্ঘটনার উপর বীমা করা হয়েছে তা কতবার হতে পারে? যাতে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পরও কোম্পানীর মুনাফা অবশিষ্ট থাকে। আর এই পরিসংখ্যান করার জন্য বিশেষ কৌশল আছে; যার সুদক্ষ কৌশলীকে (ACTUARY) বা বীমাগাণনিক বলা হয়।বর্তমানে এই ধরনের বীমার প্রচলন অধিক। আর এরই বৈধতা ও অবৈধতার ব্যাপারটি সাম্প্রতিককালীন উলামাগণের অধিকতর বিতর্কের বিষয় হয়ে পড়েছে। বর্তমানের মুসলিম-বিশ্বের প্রায় সকল প্রসিদ্ধ ও খ্যাতিসম্পন্ন উলামাগণের মতে তা অবৈধ। অধিকাংশ উলামাগণের ঐ জামাআত বলেন যে, এই বীমাতে জুয়ার গন্ধ আছে এবং সূদও। জুয়া এই জন্য বলা হচ্ছে যে, টাকা আদায়ের ব্যাপারটা এক পক্ষের (বীমাকারীর) তরফ থেকে নির্দিষ্ট ও নিশ্চিত। কিন্তু অপর পক্ষের (কোম্পানীর) তরফ থেকে তা সন্দিগ্ধ। বীমাকারী কিস্তিতে যে টাকা আদায় করে, তার সবটাই ডুবে যেতে পারে। আবার তার চাইতে বেশীও পেতে পারে। আর একেই জুয়া বলা হয়।সূদ আছে এই জন্য বলা হচ্ছে যে, এখানে টাকা দিয়ে বিনিময়ে টাকাই দেওয়া-নেওয়া হয়; যাতে কম বেশীও হয়ে থাকে। বীমাকারী কম টাকা জমা করলেও পাওয়ার সময় তার চেয়ে অনেক বেশীও পেয়ে থাকে।[1] [দিরাসাতুন শারইয়্যাহ ৪৭৭-৪৭৮ পৃঃ]
: ব্যাংকের সুদ কি হালাল?
: শাইখ মুশ্তাক আহমাদ